জমির মালিক হলে আপনাকে শুধু জমি দেখাশোনাই নয়, ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা পরিশোধের বিষয়েও সচেতন থাকতে হবে। আগে এটি করতে অফিসে গিয়ে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হতো। কিন্তু এখন ঘরে বসেই অনলাইনে মাত্র কয়েক ক্লিকে এই কর পরিশোধ করা সম্ভব। এই আর্টিকেল আমরা আপনাকে ধাপে ধাপে পুরো প্রক্রিয়াটি দেখানোর চেষ্টা করব যাতে আপনি খুবসহজে সেবাটি নিতে পারেন
ভূমি উন্নয়ন কর কী এবং কেন এটি পরিশোধ জরুরি?
ভূমি উন্নয়ন কর হলো জমির উপর ধার্য একটি সরকারি কর, যা রাষ্ট্রীয় উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় হয়। এটি নিয়মিত পরিশোধ করলে:
- আপনার জমির মালিকানা নিরাপদ থাকে।
- সরকারি রেকর্ড আপডেট হয়।
- আইনগত প্রমাণ হিসেবে দাখিলা পাওয়া যায়।
অনলাইনে খাজনা পরিশোধের প্রধান সুবিধাসমূহ:
- ⏱️ সময়ের সাশ্রয়: অফিসে দৌড়াদৌড়ির কোনো ব্যাপার নেই।
- 🏠 ঘরে বসেই আরামে: দিন হোক বা রাত, যেকোনো সময় অনলাইনে পেমেন্ট করা যায়।
- 🔍 সব পরিষ্কার: সব তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে থাকে, তাই ভুলের সম্ভাবনা কম।
- 📜 ঝটপট রশিদ: পেমেন্ট করার সাথে সাথেই দাখিলা ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।
অনলাইনে খাজনা দেওয়ার আগে কী কী লাগবে?
অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করার আগে কিছু জিনিস হাতের কাছে গুছিয়ে রাখলে সুবিধা হবে:
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নম্বর: রেজিস্ট্রেশনের জন্য এটা লাগবেই।
- সচল মোবাইল নম্বর: ওটিপি (OTP) ও যোগাযোগের জন্য।
- খতিয়ানের তথ্য: বিভাগ, জেলা, উপজেলা, মৌজা, খতিয়ান নম্বর এবং হোল্ডিং নম্বর (যদি থাকে)।
- খতিয়ানের স্ক্যান কপি/ছবি: অনেক সময় এটা আপলোড করতে হতে পারে।
- অনলাইন পেমেন্টের ব্যবস্থা: মোবাইল ব্যাংকিং (যেমন: বিকাশ, নগদ, রকেট) অথবা ব্যাংক কার্ড।
ধাপে ধাপে অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ পদ্ধতি:
- প্রথমেই ওয়েবসাইটে যান: আপনার কম্পিউটার বা মোবাইলের ব্রাউজার খুলে https://ldtax.gov.bd এই ওয়েবসাইটে চলে যান। ওয়েবসাইটের ডান পাশে দেখবেন “লগইন করুন” অপশন। সেখানে ক্লিক করে “নাগরিক/সংস্থা” সিলেক্ট করুন। যদি আপনার আগে থেকে কোনো অ্যাকাউন্ট করা থাকে, তাহলে মোবাইল নম্বর, পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন
- নতুন একাউন্ট তৈরি করুন রেজিস্ট্রেশন ফরমে চাহিত তথ্য যেমন, আপনার নাম ইংরেজিতে, মোবাইল নম্বর, ক্যাপচা কোর্ড, “সাবমিট” বাটনে ক্লিক 👇
- OPT নাম্বার নিশ্চিত করুন ফরমে উল্লেখিত মোবাইল নম্বরে একটি One Time পাসওযার্ড প্রেরণ করা হবে মোবাইল মেসেজ চেক করে One Time পাসওযার্ডটি দিয়ে সাবমিট করুন 👇
- পাসওয়ার্ড সেট করুন আপনার পছেন্দের পাসওয়ার্ড সেট করুন। পাসওয়ার্ড সর্বনিম্ন ৮ ডিজিটের হতে হবে, একটি বড় হাতের অক্ষর, একটি ছোট হাতের অক্ষর, একটি সংখ্যা একটি বিশেষ অক্ষর, থাকতে হবে। যেমন নমুনা পাসওয়ার্ড
A01717005776b@
দেখুন
- এবার কর পরিশোধের পালা: কর পরিশোধ করার জন্য “পেমেন্ট (এলএসজি)” বাটনে ক্লিক করুন। এরপর আপনার পছন্দের পেমেন্ট মাধ্যম (যেমন: বিকাশ, নগদ, রকেট বা ব্যাংক কার্ড) সিলেক্ট করুন। “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে পেমেন্ট সম্পন্ন করুন। একদম চিন্তা করবেন না, এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ একটি পেমেন্ট ব্যবস্থা। 👇
- দাখিলা (রশিদ) পেয়ে যান সাথে সাথেই: পেমেন্ট সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথেই আপনার স্ক্রিনে কর পরিশোধের রশিদ বা দাখিলা দেখতে পাবেন। এখান থেকে আপনি রশিদটি প্রিন্ট করে নিতে পারেন অথবা লিংকটি সেভ করে রাখতে পারেন, যা ভবিষ্যতে যেকোনো সময় কাজে লাগতে পারে। কী দারুণ সুবিধা! 👇
- দাখিলাটি পরে কোথায় পাবেন? যদি আপনার দাখিলার কপিটি পরবর্তীতে আবার প্রয়োজন হয়, তাহলেও কোনো চিন্তা নেই। আপনার অ্যাকাউন্টে লগইন করে “সেবাসমূহ” অপশনে ক্লিক করুন, তারপর “LDTAX” প্রোফাইলে যান। সেখানে “দাখিলা” নামে একটি অপশন দেখতে পাবেন। “দাখিলা” অপশনে ক্লিক করলে আপনি যতগুলো খাজনার রশিদ বা দাখিলা কেটেছেন, তার সবগুলো দেখতে পাবেন। যে দাখিলাটি প্রিন্ট করতে চান, সেটির “বিস্তারিত” অংশে ক্লিক করলেই দাখিলাটি দেখতে পারবেন। এখান থেকে প্রিন্ট, PDF হিসেবে সেভ করা সহ সবকিছুই করতে পারবেন। 👇
সাধারণ কিছু সমস্যা ও তার সহজ সমাধান:
টাকা কেটে নিয়েছে কিন্তু দাখিলা বা চেক পাওয়া যায়নি? একদম চিন্তা করবেন না! যদি আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেয় কিন্তু আপনি চেক পাননি, তাহলে আপনার করণীয়: পেমেন্ট সম্পন্ন হওয়ার পর যে পেজটি আসে (তা সফল হোক বা Payment fail দেখাক) সেই পেজের লিংকটি কপি করে রাখুন। এরপর আপনি আপনার LDTAX প্রোফাইলে লগইন করুন। সাইডবার থেকে “পেমেন্ট রিকনসিলেশন” অপশন সিলেক্ট করে প্রয়োজনীয় তথ্য যেমন: হোল্ডিং নম্বর, ট্রানজেকশন নম্বর, টাকার পরিমাণ, তারিখ – এই তথ্যগুলো নির্ভুলভাবে এন্ট্রি করার পর “প্রেরণ” বাটনে ক্লিক করুন। যদি সব তথ্য সঠিক থাকে, তাহলে আপনার দাখিলাটি চলে আসবে। যদি না আসে, সেক্ষেত্রে কিছু সময় অপেক্ষা করুন, কারণ পেমেন্টের তথ্য সিস্টেমে সেভ হতে একটু সময় লাগতে পারে। অথবা, Payment fail দেখানো ইউআরএলটি রিফ্রেশ করতে থাকুন, তাহলেই ইনশাআল্লাহ দাখিলাটি পেয়ে যাবেন। 👇
✅ শেষ কথা: এবার আপনিও পারবেন সহজে খাজনা দিতে!
দেখলেন তো বন্ধুরা, অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা দেওয়াটা এখন আর কোনো রকেট সায়েন্স নয়! 😊 আগে যেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে বা অফিসের দ্বারে দ্বারে ঘুরে হয়রান হতে হতো, এখন সেখানে ঘরে বসেই কয়েকটা ক্লিকে সব কাজ সারা যাচ্ছে। আমরা চেষ্টা করেছি পুরো প্রক্রিয়াটা যতটা সম্ভব সহজ করে আপনাদের সামনে তুলে ধরতে, যাতে আপনারা নিজেরাই নিজেদের জমির খাজনা পরিশোধ করে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।
নিয়মিত ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা শুধু আপনার জমির মালিকানাকেই সুরক্ষিত করে না, দেশের উন্নয়নেও সরাসরি অবদান রাখে। তাই আর দেরি না করে, আজই আপনার জমির খাজনা অনলাইনে পরিশোধ করে ফেলুন আর ডিজিটাল বাংলাদেশের একজন গর্বিত নাগরিক হয়ে উঠুন! 💪
এই দরকারি তথ্যগুলো আপনার বন্ধু বা পরিচিতদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন! হয়তো আপনার একটি শেয়ার অন্য কারো অনেকখানি সময় ও ভোগান্তি বাঁচিয়ে দেবে। আর হ্যাঁ, পুরো প্রক্রিয়াটি বুঝতে আপনার কোনো অসুবিধা হলো কিনা, অথবা আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে, নিচে কমেন্ট বক্সে লিখে জানান আপনাদের প্রতিটি কমেন্ট আমাদের জন্য অনেক মূল্যবান। আমরা চেষ্টা করবো আপনাদের সব প্রশ্নের উত্তর দিতে।
ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন আর ডিজিটাল সেবা ব্যবহার করে জীবনকে আরও সহজ করে তুলবেন, এই কামনাই রইলো। শুভকামনা! ✨