টিকিট কাটার টেনশন শেষ! ট্রেনের টিকিট ঘরে বসে কাটার সেরা উপায় (2025)

By admin
30 Min Read

ট্রেনের টিকিট চাই? নো টেনশন! ঘরে বসেই কাটুন সহজ উপায়ে (২০২৫ আপডেট)

ভূমিকা: ট্রেন ভ্রমণটা হোক আনন্দময় আর টিকিট কাটা আরও সহজ! 🚆🎉

হ্যালো বন্ধুরা! কেমন আছেন সবাই? ট্রেন ভ্রমণ মানেই তো একটা অন্যরকম আনন্দ, তাই না? ঝিকঝিক শব্দ, জানালার পাশে বসে প্রকৃতি দেখা, আর সময়ের মধ্যেই গন্তব্যে পৌঁছানো – সব মিলিয়ে ট্রেন কিন্তু আমাদের সবারই খুব প্রিয় একটা বাহন। আর এই আনন্দযাত্রাটা শুরু হয় একটা নিখুঁত টিকিট কাটার মাধ্যমে।

আগে টিকিট কাটতে লাইনে দাঁড়ানোর যে ঝক্কি ছিল, এখন কিন্তু প্রযুক্তির কল্যাণে সেই দিন আর নেই! অনলাইন ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ আর বিভিন্ন ডিজিটাল পেমেন্টের মাধ্যমে টিকিট কাটা এখন একদম হাতের মুঠোয়। এই লেখায় আমরা আলোচনা করবো বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেনের টিকিট নিয়ে আদ্যোপান্ত – কীভাবে অনলাইনে বা কাউন্টার থেকে টিকিট কাটবেন, মোবাইলে টিকিট কাটার সহজ উপায়, বিকাশের মতো পেমেন্ট অপশন, টিকিট চেক করার নিয়ম, টিকিটের দাম, টিকিট ফেরত দেওয়ার পলিসি, দরকারি অ্যাপস আর টিকিট কেনার শর্তাবলী। ২০২৫ সালের একদম লেটেস্ট সব তথ্য আর আপনাদের সাধারণ প্রশ্নগুলোর উত্তরও থাকছে এখানে। তো চলুন, শুরু করা যাক আমাদের আজকের ট্রেনযাত্রা!

সবার আগে দরকারি লিঙ্কটা জেনে নিন: বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিট কাটার আসল সরকারি ওয়েবসাইট হলো eticket.railway.gov.bd। টিকিট কাটার জন্য এই সাইটটাই কিন্তু সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য জায়গা, বুঝলেন?

ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়মে নতুন কী কী এলো? (লেটেস্ট আপডেট) 🆕📜

বাংলাদেশ রেলওয়ে কিন্তু সব সময় চেষ্টা করছে আমাদের যাত্রা আরও আরামদায়ক করতে আর টিকিট নিয়ে যেকোনো অনিয়ম বন্ধ করতে। তাই তারা প্রায়ই কিছু নতুন নিয়মকানুন নিয়ে আসে। ২০২৫ সাল বা এর আশেপাশে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে বা আসতে পারে, যেমন ধরুন:

  • এনআইডি কার্ড আবশ্যক: এখন টিকিট কেনার সময় আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নম্বর অবশ্যই দিতে হবে এবং সেটি যাচাই করা হবে। এর ফলে একজন নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি টিকিট কিনতে পারবে না, আর কালোবাজারিও কমে যাবে। দারুণ না ব্যাপারটা?
  • যার টিকিট, তারই ভ্রমণ: এই নিয়মটা কিন্তু খুব কঠোরভাবে মানা হচ্ছে। মানে, যার নামে টিকিট, তাকেই ভ্রমণ করতে হবে। ট্রেনে ওঠার সময় আপনার এনআইডি বা ছবিসহ অন্য কোনো পরিচয়পত্র দেখতে চাইতে পারে কিন্তু!
  • অনলাইনে টিকিটের সংখ্যা বৃদ্ধি: কাউন্টারের ভিড় কমাতে আর ঘরে বসে টিকিট কাটা সহজ করতে বিভিন্ন ট্রেনে অনলাইনে টিকিটের সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
  • পেমেন্ট এখন আরও সহজ: বিকাশ, রকেট, নগদের মতো মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস আর বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ড দিয়ে অনলাইনে টিকিট কাটার টাকা পরিশোধ করাটা এখন আরও অনেক সহজ ও দ্রুত হয়ে গেছে।
  • “Rail Sheba” অ্যাপ হচ্ছে আরও স্মার্ট: আমাদের সবার প্রিয় “Rail Sheba” অ্যাপটিকে আরও সহজে ব্যবহার করার মতো করে তৈরি করা হচ্ছে আর নতুন নতুন সুবিধাও যোগ করা হচ্ছে।

এই যে নতুন নিয়মগুলো, এগুলো কিন্তু আমাদের সবারই জেনে রাখা ভালো। তাহলে আর টিকিট নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা থাকবে না!

কবে থেকে পাওয়া যায় অগ্রিম টিকিট? (অনলাইন সময়সূচী) 📅⏰

ট্রেনের অগ্রিম টিকিট সাধারণত যাত্রার ৫ থেকে ১০ দিন আগে পাওয়া যায়। তবে, ঈদ বা পূজার মতো বড় উৎসবের সময় বা বিশেষ কোনো কারণে এই সময়টা একটু এদিক-ওদিক হতে পারে।

  • সাধারণ নিয়ম: বেশিরভাগ সময়, যেদিন ভ্রমণ করবেন তার ঠিক ৫ দিন আগে সকাল ৮টা থেকে অনলাইনে আর কাউন্টারে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়ে যায়। যেমন, আপনি যদি মাসের ১০ তারিখে কোথাও যেতে চান, তাহলে মাসের ৫ তারিখে সকাল ৮টা থেকেই টিকিট কাটার জন্য প্রস্তুত থাকতে পারেন!
  • পশ্চিমবঙ্গের ট্রেনের টিকিট: কিছু কিছু রুটে, যেমন ধরুন ঢাকা-কলকাতা, টিকিট কিন্তু আরও আগে, প্রায় মাসখানেক আগেও পাওয়া যেতে পারে।
  • বিশেষ ঘোষণা খেয়াল রাখুন: ঈদ বা অন্য কোনো বড় উৎসবের সময় কবে থেকে অগ্রিম টিকিট দেওয়া হবে, সেই তারিখ আর সময়সূচী কিন্তু বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে আর খবরে জানিয়ে দেওয়া হয়। ওই সময় টিকিট ছাড়ার কয়েক দিনের মধ্যেই সব শেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই একদম সতর্ক থাকতে হবে!

ছোট্ট একটা টিপস: অগ্রিম টিকিট কাটার জন্য নির্ধারিত সময়ের একটু আগে থেকেই (eticket.railway.gov.bd) ওয়েবসাইটে প্রস্তুত থাকুন আর দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করুন!

অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কীভাবে কাটবেন? (ধাপে ধাপে) 💻🖱️

অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটা এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় আর আরামদায়ক একটি পদ্ধতি। চলুন, দেখে নিই কীভাবে ধাপে ধাপে এই কাজটি সম্পন্ন করবেন:

  1. ওয়েবসাইটে যান আর অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন/লগইন করুন:
    • প্রথমে চলে যান বাংলাদেশ রেলওয়ের ই-টিকেটিং ওয়েবসাইটে: https://eticket.railway.gov.bd/
    রেলওয়ে ই-টিকেটিং ওয়েবসাইট
    বাংলাদেশ রেলওয়ের ই-টিকেটিং ওয়েবসাইটের হোমপেজ।

    যদি আপনার আগে থেকে কোনো অ্যাকাউন্ট তৈরি করা না থাকে, তাহলে “Register” বা “নিবন্ধন করুন” বাটনে ক্লিক করুন। এরপর আপনার মোবাইল নম্বর, NID নম্বর আর জন্মতারিখ দিয়ে “Verify”তে ক্লিক করুন। যদি জন্মসনদ দিয়ে অ্যাকাউন্ট করতে চান তাহলে “Submit Data”তে ক্লিক করলে একটি ফরম আসবে। এখানে আপনার ইমেইল, পোস্ট কোড, ঠিকানা এবং একটি পছন্দের পাসওয়ার্ড দিয়ে “Complete Registration” বাটনে ক্লিক করলে, আপনার মোবাইল নম্বরে একটি OTP (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) যাবে। সেটি দিয়ে “Continue” করলে আপনার অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়ে যাবে!

    মোবাইল ওটিপি ভেরিফিকেশন পপআপ
    মোবাইল নম্বরে পাঠানো OTP দিয়ে ভেরিফিকেশন।

    আর যদি অ্যাকাউন্ট থেকেই থাকে, তাহলে মোবাইল নম্বর/ইমেইল আর পাসওয়ার্ড দিয়ে “Login” করে ফেলুন।

  2. আপনার টিকিট খুঁজুন (Search Ticket):

    কোথায় যাবেন, কবে যাবেন – সব তথ্য দিন:

    • Station From (কোথা থেকে উঠবেন): যে স্টেশন থেকে আপনার যাত্রা শুরু।
    • Station To (কোথায় নামবেন): আপনার গন্তব্য স্টেশন।
    • Date of Journey (কবে যাবেন): যেদিন ভ্রমণ করতে চান, সেই তারিখটা।
    • Choose Class (কেমন সিট চান): যেমন – শোভন, শোভন চেয়ার, স্নিগ্ধা, এসি সিট, এসি বার্থ – আপনার পছন্দ অনুযায়ী।

    সব তথ্য সঠিকভাবে দিয়ে “Find Tickets” বা “Search Trains” বাটনে ক্লিক করুন।

    ট্রেন টিকিট খোঁজার ফর্ম
    প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে টিকিট খুঁজুন।
  3. পছন্দের ট্রেন আর সিট বেছে নিন:
    1. আপনার দেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে ওই রুটের ট্রেন, কখন ছাড়বে, আর সিট খালি আছে কিনা (যদি থাকে) – সব দেখিয়ে দেবে।
    2. আপনার যে ট্রেনটা পছন্দ, সেটার পাশে “View Seats” বা “Select Seat” অপশনে ক্লিক করুন।
    3. এরপর ট্রেনের বগির একটি নকশা দেখতে পাবেন, যেখান থেকে আপনার পছন্দের খালি সিট (সাধারণত সবুজ রঙে দেখানো হয়) বেছে নিতে পারবেন। একবারে সাধারণত চারটির বেশি সিট নির্বাচন করা যায় না।
    4. সিট পছন্দ হয়ে গেলে “Continue Purchase” বা এই ধরনের কোনো বাটনে ক্লিক করুন।
    ট্রেন ও সিট নির্বাচন
    পছন্দের ট্রেন এবং সিট নির্বাচন করুন।
  4. যাত্রীর তথ্য দিন (Passenger Details):
    • প্রত্যেকটা সিটের জন্য যিনি ভ্রমণ করবেন তার নাম আর বয়স সঠিকভাবে লিখতে হবে। যার নামে টিকিট, তার এনআইডি নম্বরও লাগতে পারে, কারণ এনআইডি ভেরিফিকেশন তো এখন আবশ্যক!
    • যোগাযোগের জন্য একটি সচল মোবাইল নম্বর আর ইমেইল আইডি (যদি থাকে) দিয়ে দিন।
    যাত্রীর তথ্য প্রদান
    ভ্রমণকারী যাত্রীর তথ্য সঠিকভাবে দিন।
  5. ভেরিফিকেশন ও পেমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু:

    যাত্রীর তথ্য দেওয়ার পর, আপনার মোবাইল নম্বরে একটি OTP (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) যাবে। সেটি নির্ধারিত স্থানে বসিয়ে “Continue” বাটনে ক্লিক করলে আপনি বিভিন্ন পেমেন্ট গেটওয়ে দেখতে পাবেন। আপনার পছন্দের পেমেন্ট গেটওয়ে (যেমন বিকাশ, নগদ, কার্ড ইত্যাদি) সিলেক্ট করে “Confirm Purchase” বা “Process Payment” বাটনে ক্লিক করুন।

    ওটিপি ভেরিফিকেশন এবং পেমেন্ট গেটওয়ে নির্বাচন
    ওটিপি ভেরিফিকেশন এবং পেমেন্ট গেটওয়ে নির্বাচন।
  6. টাকা পরিশোধ করুন:

    পেমেন্ট গেটওয়ে সিলেক্ট করার পর, আপনাকে টিকিটের মোট মূল্য দেখানো হবে। এরপর বিভিন্ন অপশন থেকে আপনার সুবিধামতো একটি বেছে নিন (যেমন: বিকাশ, রকেট, নগদ, ভিসা/মাস্টারকার্ড/এমেক্স কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং)।

    পেমেন্ট গেটওয়ের নির্দেশাবলী সঠিকভাবে অনুসরণ করে টাকা পরিশোধ করুন। এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ একটি প্রক্রিয়া।

    পেমেন্ট সম্পন্নকরণ
    নিরাপদ পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করুন।
  7. টিকিট ডাউনলোড করুন আর প্রিন্ট করে নিন:
    • টাকা পরিশোধ সম্পন্ন হলেই আপনার টিকিট নিশ্চিত হয়ে যাবে! স্ক্রিনে টিকিটের সব তথ্য আর একটি ডাউনলোড অপশন চলে আসবে। টিকিটটা PDF ফরম্যাটে নামিয়ে ফেলুন।
    • আপনার ইমেইলেও টিকিটের একটি কপি চলে যেতে পারে।
    • ডাউনলোড করা টিকিটটা প্রিন্ট করে নিন। ট্রেনে ওঠার সময় এই প্রিন্ট করা কপি আর আপনার এনআইডি কার্ড বা ছবিসহ অন্য কোনো পরিচয়পত্র কিন্তু অবশ্যই সাথে রাখতে হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে ই-টিকেট পোর্টাল
দেখুন তো, চেনা চেনা লাগছে কিনা? এটি বাংলাদেশ রেলওয়ের ই-টিকেট পোর্টালের একটি ছবি।

মোবাইল দিয়েই টিকিট? “Rail Sheba” অ্যাপ আছে না! 📱👍

বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি নিজস্ব মোবাইল অ্যাপ আছে, নাম “Rail Sheba”। এটি ব্যবহার করেও কিন্তু খুব সহজে ট্রেনের টিকিট কেটে ফেলা যায়। কীভাবে? চলুন দেখি:

  1. অ্যাপটি নামিয়ে নিন: গুগল প্লে স্টোর (Android ফোনের জন্য) বা অ্যাপল অ্যাপ স্টোর (iPhone-এর জন্য) থেকে “Rail Sheba” অ্যাপটি ডাউনলোড করে আপনার ফোনে ইনস্টল করে ফেলুন।
  2. রেজিস্ট্রেশন বা লগইন: অ্যাপটি খুলে আপনার মোবাইল নম্বর, এনআইডি নম্বর আর অন্যান্য তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে নিন। আর যদি আগে থেকেই ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট থাকে, তাহলে সেটি দিয়েই অ্যাপে লগইন করতে পারবেন।
  3. টিকিট কিনুন: অ্যাপের হোম স্ক্রিনেই “Purchase Ticket” বা “Buy Ticket” এই ধরনের একটি অপশন পাবেন। ওটাতে ট্যাপ করুন।
  4. কোথায় যাবেন, কবে যাবেন: ওয়েবসাইটের মতোই এখানেও যাত্রার স্থান, গন্তব্য, তারিখ আর কেমন সিট চান (ট্রেনের শ্রেণী) – সব সিলেক্ট করুন।
  5. ট্রেন আর সিট পছন্দ করুন: যে ট্রেনগুলো পাওয়া যাচ্ছে আর যে সিটগুলো খালি আছে, সেখান থেকে আপনার পছন্দেরটা বেছে নিন।
  6. যাত্রীর তথ্য দিন আর টাকা পরিশোধ করুন: যিনি ভ্রমণ করবেন তার তথ্য দিন আর মোবাইল ব্যাংকিং বা কার্ডের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করে ফেলুন।
  7. টিকিট দেখুন আর সেভ করুন: টাকা পরিশোধ হয়ে গেলেই অ্যাপের মধ্যেই আপনার ই-টিকেটটা দেখতে পাবেন। “My Tickets” বা এই ধরনের একটি সেকশনে এটি সেভ হয়ে থাকবে। দরকার হলে স্ক্রিনশট নিয়ে রাখতে পারেন বা ইমেইলে পাঠিয়ে প্রিন্টও করে নিতে পারেন।

একটা কথা খেয়াল রাখবেন: বিকাশে বা অন্য কোনো মোবাইল ব্যাংকিং দিয়ে টাকা পরিশোধ করার সময় কিন্তু সামান্য কিছু সার্ভিস চার্জ প্রযোজ্য হতে পারে। টাকা পরিশোধ করার আগে চার্জের পরিমাণটা একবার দেখে নেবেন।

আপনার টিকিটটা ঠিক আছে তো? কীভাবে চেক করবেন? 🤔✅

আপনি যে ট্রেনের টিকিটটা কিনেছেন, সেটি আসল কিনা বা সব তথ্য ঠিকঠাক আছে কিনা, তা মিলিয়ে দেখার কয়েকটা উপায় আছে কিন্তু:

  • অনলাইন পোর্টালে: eticket.railway.gov.bd ওয়েবসাইটে আপনার অ্যাকাউন্টে লগইন করে মেনু বার থেকে “Verify-Ticket” সেকশনে গেলেই টিকিট ভেরিফাই করার জন্য ২টি অপশন দেখতে পাবেন “Online Ticket” ও “Counter Ticket”। আপনার যে মাধ্যম থেকে টিকিট ক্রয় করেছেন তা সিলেক্ট করুন। এরপর “Enter PNR/Ticket Number” অংশে আপনার টিকিটে লেখা নম্বরটি টাইপ করুন, “Mobile Number” দিন এবং সর্বশেষ ক্যাপচাটি ভেরিফাই করে “VERIFY TICKET” এ ক্লিক করলেই আপনার টিকিটের সকল তথ্য দেখতে পাবেন।
  • verify-ticket bd
    প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ভেরিফাই অপশনে ক্লিক করুন
  • “Rail Sheba” অ্যাপে: “Rail Sheba” অ্যাপ দিয়ে টিকিট যাচাই করতে প্রথমে আপনার অ্যাকাউন্টে লগইন করুন। “My Ticket” বা “থ্রি-ডট” বার থেকে “Verify-Ticket” সেকশনে যান। সেখানে “Online Ticket” ও “Counter Ticket” অপশন দেখতে পাবেন। আপনার টিকিট ক্রয়ের মাধ্যম সিলেক্ট করে “Enter PNR/Ticket Number” অংশে টিকিটের নম্বরটি টাইপ করুন, “Mobile Number” দিন এবং ক্যাপচা ভেরিফাই করে “VERIFY TICKET” এ ক্লিক করলেই আপনার টিকিটের তথ্য প্রদর্শিত হবে।
  • মোবাইল দিয়ে টিকিট ভেরিফাই করুন
  • SMS-এ কনফার্মেশন: টিকিট কেনার পরেই তো আপনার মোবাইলে একটি কনফার্মেশন SMS আসে, তাই না? সেখানে PNR নম্বর, যাত্রার তারিখ, ট্রেনের নম্বর – এসব জরুরি তথ্য লেখা থাকে।
  • verify-ticket tte bd
    SMS এ আপনার টিকিটের তথ্য
  • ট্রেনে টিটিই দেখবেন: ট্রেনে ওঠার পর টিটিই (Travelling Ticket Examiner) যখন আসবেন, তখন তিনি আপনার টিকিট আর এনআইডি কার্ড বা অন্য কোনো পরিচয়পত্র দেখে টিকিটটা যাচাই করে নেবেন।
verify-ticket tte bd
টিটিই আপনার টিকিটটি যাচাই করবেন

যদি কোনো সন্দেহ হয়: যদি কোনো কারণে আপনার টিকিটের ব্যাপারে সামান্যতম সন্দেহও হয়, তাহলে একদম দেরি না করে রেলওয়ের হেল্পলাইনে বা কাছের স্টেশনে যোগাযোগ করুন।

ট্রেনের টিকিটের দাম কেমন হতে পারে? (একটি ধারণা) 💰

ট্রেনের টিকিটের দাম কিন্তু কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে, যেমন ধরুন:

  • দূরত্ব: যত বেশি দূরে যাবেন, টিকিটের দামও তত বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক।
  • সিটের ধরণ: শোভন, শোভন চেয়ার, প্রথম শ্রেণী, স্নিগ্ধা, এসি সিট, এসি বার্থ – একেক রকম সিটের দাম একেক রকম। এসি সিটের দাম নন-এসি সিটের চেয়ে স্বাভাবিকভাবেই বেশি হবে।
  • ট্রেনের ধরণ: আন্তঃনগর, মেইল নাকি লোকাল ট্রেন – এগুলোর টিকিটের দামও কিন্তু আলাদা হয়। আন্তঃনগর ট্রেনের ভাড়া সাধারণত একটু বেশি হয়ে থাকে।
  • অন্যান্য চার্জ: মাঝে মাঝে ব্রিজ বা কালভার্টের চার্জ বা অন্য কোনো সার্ভিস চার্জও মূল ভাড়ার সাথে যোগ হতে পারে।

কোন রুটে কোন ট্রেনের টিকিটের দাম কত, সেটা জানার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো eticket.railway.gov.bd ওয়েবসাইটে বা “Rail Sheba” অ্যাপে টিকিট খোঁজার সময়ই দেখে নেওয়া। সেখানে সিট পছন্দ করার আগেই টিকিটের দাম দেখিয়ে দেয়। এছাড়া, রেল স্টেশনে গিয়েও ভাড়ার তালিকা জেনে নিতে পারেন।

টিকিট ফেরত দিতে চান? নিয়মকানুন জেনে নিন (রিফান্ড পলিসি) 🔄💵

কখনও কখনও তো এমন হতেই পারে যে টিকিট কাটার পর আর যাওয়া হলো না। সেক্ষেত্রে টিকিট ফেরত দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের কিছু নিয়মকানুন আছে। সাধারণত, টিকিট ফেরত দিলে কিছু টাকা সার্ভিস চার্জ হিসেবে কেটে রাখা হয়।

  • কখন ফেরত দিলে কত টাকা কাটবে:
    • ট্রেন ছাড়ার ৪৮ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় আগে যদি ফেরত দেন: এসি সিটের জন্য ৪০ টাকা, প্রথম শ্রেণীর জন্য ৩০ টাকা আর অন্য সব শ্রেণীর জন্য ২৫ টাকা করে প্রতি টিকিটে কেটে রাখা হবে।
    • যদি ৪৮ ঘণ্টার কম কিন্তু ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় আগে ফেরত দেন: টিকিটের মোট দামের ২৫% কেটে নেওয়া হবে।
    • যদি ২৪ ঘণ্টার কম কিন্তু ১২ ঘণ্টার বেশি সময় আগে ফেরত দেন: টিকিটের দামের ৫০% কাটা যাবে।
    • যদি ১২ ঘণ্টার কম কিন্তু ৬ ঘণ্টার বেশি সময় আগে ফেরত দেন: টিকিটের দামের ৭৫% কাটা যাবে।
    • আর যদি ট্রেন ছাড়ার ৬ ঘণ্টারও কম সময় বাকি থাকে: তাহলে কিন্তু কোনো টাকাই ফেরত পাবেন না!
  • অনলাইনে কেনা টিকিট কীভাবে ফেরত দেবেন:
    • অনলাইনে যে টিকিটগুলো কেনা হয়, সেগুলো সাধারণত অনলাইনেই (eticket.railway.gov.bd) আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে রিফান্ডের জন্য আবেদন করা যায়।
    • রিফান্ডের টাকাটা সাধারণত যে উপায়ে পেমেন্ট করেছিলেন (যেমন: বিকাশ বা কার্ড), সেভাবেই ফেরত আসে। তবে, টাকাটা ফেরত আসতে কয়েক দিন সময় লাগতে পারে।
  • কাউন্টার থেকে কেনা টিকিট কীভাবে ফেরত দেবেন: কাউন্টার থেকে যে টিকিটগুলো কেনা হয়, সেগুলো সাধারণত ওই স্টেশন কাউন্টার থেকেই ফেরত দিতে হয়।

একটি জরুরি কথা: টিকিট ফেরত দেওয়ার নিয়মকানুন আর কত টাকা কাটবে, সেটা কিন্তু সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হতে পারে। তাই, সবচেয়ে ভালো হয় যদি রেলওয়ের ওয়েবসাইট বা স্টেশন থেকে একদম হালনাগাদ তথ্যটা জেনে নেন।

ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য কোন অ্যাপগুলো ভালো? 📱🌟

এখন বাংলাদেশে ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য প্রধান আর সরকারি অ্যাপ হলো একটিই:

  • Rail Sheba (রেল সেবা): এটা হলো বাংলাদেশ রেলওয়ের নিজস্ব অ্যাপ। এটি দিয়ে আপনি টিকিট কেনা, সিট দেখা, ট্রেনের সময় জানা, টিকিট ঠিক আছে কিনা দেখা – এরকম অনেক কাজই করতে পারবেন।

এছাড়াও, কিছু থার্ড-পার্টি অ্যাপ বা সার্ভিস (যেমন: সহজ ডট কম, যারা রেলওয়ের ই-টিকেটিং সিস্টেমটা পরিচালনা করে) তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকেও টিকিট কেনার সুযোগ দেয়। এগুলো অনেক সময় বিকাশ বা অন্য পেমেন্ট অ্যাপের সাথে যুক্ত থাকে। তবে, সবসময় চেষ্টা করবেন সরকারি বা অনুমোদিত মাধ্যম ব্যবহার করতে, সেটাই সবচেয়ে নিরাপদ।

ট্রেনের টিকিট কেনার সময় কী কী শর্ত মেনে চলতে হয়? 📝

ট্রেনের টিকিট কেনার সময় কিছু সাধারণ নিয়মকানুন থাকে, যেগুলো আমাদের সবারই মেনে চলা উচিত:

  • এনআইডি কিন্তু লাগবেই: টিকিট কেনার সময় আর ট্রেনে ওঠার সময় এনআইডি বা ছবিসহ অন্য কোনো পরিচয়পত্র দেখানো এখন বাধ্যতামূলক।
  • যার টিকিট, তারই ভ্রমণ: টিকিটে যার নাম লেখা থাকবে, তাকেই কিন্তু ভ্রমণ করতে হবে। টিকিট একজনের থেকে আরেকজনকে হস্তান্তর করা যাবে না।
  • বাচ্চাদের জন্য নিয়ম: ছোট বাচ্চাদের (সাধারণত ৩-১২ বছর) জন্য অর্ধেক ভাড়ায় টিকিট কাটার সুযোগ থাকে, তবে তাদের জন্য আলাদা সিট নাও পেতে পারেন (যদি ‘No Seat’ অপশন থাকে)। ৩ বছরের ছোট বাচ্চাদের জন্য সাধারণত টিকিট লাগে না (যদি তারা বাবা-মায়ের সাথে একই সিটে বসে)।
  • অনলাইন টিকিটের প্রিন্ট কপি: অনলাইনে যে টিকিটটা কিনবেন, সেটার একটা প্রিন্ট কপি অথবা অ্যাপে দেখানো ই-টিকেটটা কিন্তু ভ্রমণের সময় অবশ্যই সাথে রাখতে হবে।
  • টিকিট ফেরত বা তারিখ পরিবর্তন: টিকিট ফেরত দিতে চাইলে বা যাত্রার তারিখ বদলাতে চাইলে রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ীই সেটা করতে হবে।
  • কয়টি টিকিট কিনতে পারবেন: একজন ব্যক্তি একটি এনআইডি ব্যবহার করে একটি যাত্রার জন্য সাধারণত চারটির বেশি টিকিট কিনতে পারবেন না।

এই নিয়মগুলো মেনে চললে আপনার ট্রেন ভ্রমণটা আরও গোছানো আর সুন্দর হবে, তাই না?

ভিডিওতে দেখুন, টিকিট কাটা কত সহজ! (গাইড)

নিচের ভিডিও টিউটোরিয়ালটা দেখলে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার পুরো ব্যাপারটা আরও পানির মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে!

এই সুন্দর ভিডিওটির জন্য ধন্যবাদ JM Technology Info ইউটিউব চ্যানেলকে!

ট্রেন টিকিট নিয়ে আপনাদের কমন কিছু প্রশ্ন আর তার উত্তর (FAQ) 🤔💡

প্রশ্ন ১: অনলাইনে টিকিট কাটার সময় ওয়েবসাইট এত স্লো কেন? কী করা যায়?

উত্তর: হ্যাঁ, এটা ঠিক যে বিশেষ করে যখন অগ্রিম টিকিট ছাড়ে, তখন ওয়েবসাইটে প্রচুর চাপ পড়ে। তখন একটু ধৈর্য ধরতে হবে। ভালো ইন্টারনেট কানেকশন ব্যবহার করুন, একটু আগে থেকে লগইন করে প্রস্তুত থাকুন। আর না হলে, অন্য কোনো ব্রাউজার বা ফোন/কম্পিউটার দিয়েও চেষ্টা করে দেখতে পারেন।

প্রশ্ন ২: টাকা কেটে নিয়েছে কিন্তু টিকিট পাইনি বা কনফার্ম হয়নি, এখন কী হবে?

উত্তর: আরেব্বাস! এমনটা হলে সাধারণত চিন্তা করার কিছু নেই। ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে টাকাটা আপনাআপনি আপনার অ্যাকাউন্টে ফেরত চলে আসার কথা। যদি না আসে, তাহলে আপনার ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের স্টেটমেন্ট আর ট্রানজেকশনের সব তথ্য নিয়ে রেলওয়ের কাস্টমার কেয়ারে বা support@eticket.railway.gov.bd এই ইমেইলে একটি মেইল করে দিন।

প্রশ্ন ৩: একটি এনআইডি দিয়ে একবারে কয়টা টিকিট কাটা যায়?

উত্তর: সাধারণত, একটি জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) ব্যবহার করে একটি যাত্রার জন্য একজন ব্যক্তি একবারে চারটির বেশি টিকিট কিনতে পারবেন না।

প্রশ্ন ৪: ছোট বাচ্চাদের জন্য টিকিটের নিয়মটা কী?

উত্তর: সাধারণত, ৩ থেকে ১২ বছর বয়সী বাচ্চাদের জন্য অর্ধেক ভাড়ায় টিকিট কাটার নিয়ম আছে (যদি তাদের জন্য আলাদা সিট দরকার হয়)। তবে, এটা কিন্তু ট্রেনের শ্রেণী আর রেলওয়ের তখনকার নিয়মের উপরও নির্ভর করে। আর ৩ বছরের ছোট বাচ্চাদের জন্য সাধারণত টিকিট লাগে না, যদি তারা বাবা-মায়ের সাথে একই সিটে বসে।

প্রশ্ন ৫: টিকিট যদি হারিয়ে যায়, তাহলে কী করার আছে?

উত্তর: ওহহো! কাউন্টার থেকে কেনা টিকিট হারিয়ে গেলে কিন্তু ডুপ্লিকেট টিকিট পাওয়াটা একটু মুশকিল। তবে, অনলাইনে যে টিকিটগুলো কেনা হয়, সেগুলো আপনি আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে আবার ডাউনলোড বা প্রিন্ট করে নিতে পারবেন। এটাই ডিজিটাল যুগের সুবিধা!

প্রশ্ন ৬: ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি থেকে বাঁচতে কী করা উচিত?

উত্তর: এটা খুব জরুরি একটা প্রশ্ন! সবসময় চেষ্টা করবেন সরকারি ওয়েবসাইট (eticket.railway.gov.bd), “Rail Sheba” অ্যাপ অথবা সরাসরি রেল স্টেশনের কাউন্টার থেকে টিকিট কিনতে। অচেনা কারও কাছ থেকে বা বেশি দামে টিকিট কেনা থেকে একদম দূরে থাকবেন, কেমন?

ট্রেনের টিকিট নিয়ে আরও জানতে চান? এই লিঙ্কগুলো কাজে লাগতে পারে!

  • বাংলাদেশ রেলওয়ের সরকারি ওয়েবসাইট: https://railway.gov.bd/
  • ই-টিকেটিং পোর্টাল (যেখান থেকে টিকিট কাটেন): https://eticket.railway.gov.bd/
  • “Rail Sheba” অ্যাপ (Android ফোনের জন্য): গুগল প্লে স্টোরে গিয়ে সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন।
  • “Rail Sheba” অ্যাপ (iPhone-এর জন্য): অ্যাপল অ্যাপ স্টোরে সার্চ করুন।
  • রেলওয়ের কল সেন্টার/হেল্পলাইন নম্বর: ১০৫ (এটা মাঝে মাঝে পরিবর্তিত হতে পারে, ওয়েবসাইটে দেখে নেবেন) অথবা ১৬৩১৭।

শেষ কথা: প্রযুক্তির ছোঁয়ায় ট্রেন ভ্রমণ এখন আরও আরামের! 🛤️😊

দেখলেন তো, ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ার সাথে সাথে আমাদের বাংলাদেশ রেলওয়েও কিন্তু পিছিয়ে নেই! অনলাইন টিকিটিং সিস্টেম, মোবাইল অ্যাপ আর আধুনিক সব পেমেন্ট ব্যবস্থার কারণে ট্রেনের টিকিট কাটা এখন আগের চেয়ে অনেক সহজ, অনেক দ্রুত আর অনেক বেশি স্বচ্ছ। এই লেখায় যে নিয়মকানুন আর টিপসগুলো নিয়ে আলোচনা করলাম, সেগুলো মেনে চললে আশা করি আপনাদের ট্রেনের টিকিট কাটার অভিজ্ঞতা আরও অনেক ভালো হবে। তবে, একটা কথা মনে রাখবেন, রেলওয়ের নিয়মকানুন আর সিস্টেম কিন্তু সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হতে পারে, তাই সবসময় চেষ্টা করবেন একদম লেটেস্ট তথ্যের জন্য তাদের সরকারি মাধ্যমগুলোয় একটু ঢুঁ মারতে।

আপনাদের আগামী ট্রেন ভ্রমণটা খুব আনন্দময় আর নিরাপদ হোক, এই কামনা রইলো! আর হ্যাঁ, লেখাটা কেমন লাগলো, জানাতে ভুলবেন না কিন্তু!

Share This Article
Leave a Comment