অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ পদ্ধতি এখন খুবই সহজ। Easy process 2025

By admin
33 Min Read

}

অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ: ২০২৫ সালের সম্পূর্ণ নতুন পদ্ধতি (ldtax.gov.bd)

জমির মালিক হিসেবে আমাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো সময়মতো ভূমি উন্নয়ন কর বা আমরা সহজ কথায় জমির খাজনা বলি, সেটা পরিশোধ করা। এটা শুধু একটা নিয়ম মেনে চলাই নয়, বরং দেশের উন্নয়নেও আমাদের সবার ছোট্ট একটা অবদান। আর সবচেয়ে বড় এবং খুশির খবর হলো, এখন ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ পদ্ধতি সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক হয়ে গেছে! এর মানে, আগের মতো তহসিল অফিসে গিয়ে আর লাইনে দাঁড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই। আপনি ঘরে বসেই, আপনার সুবিধামতো সময়ে, খুব সহজে অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর দিতে পারবেন। ভাবছেন কীভাবে? একদম চিন্তা করবেন না! এই গাইডে আমরা ২০২৫ সালের সর্বশেষ নিয়ম অনুযায়ী, ছবি আর ভিডিওর মাধ্যমে ধাপে ধাপে আপনাকে দেখিয়ে দেব, কীভাবে আপনি নিজেই ldtax.gov.bd পোর্টাল ব্যবহার করে আপনার জমির ভূমি কর পরিশোধ করতে পারবেন। চলুন, আর দেরি না করে শুরু করা যাক!

অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করে দেশের উন্নয়নে অংশ নিন
আসুন, নিয়মিত ও সঠিকভাবে অনলাইনে ভূমি কর দিয়ে দেশের উন্নয়নে আমরাও সক্রিয়ভাবে অংশ নিই।

ভূমি উন্নয়ন কর: এটা আসলে কী, আর কেনই বা সময়মতো দেওয়া এত জরুরি?

খুব সহজভাবে বলতে গেলে, ভূমি উন্নয়ন কর হলো আপনার মালিকানাধীন জমির ব্যবহারের জন্য সরকারকে দেওয়া একটা বাৎসরিক ফি বা কর। আগে আমরা এটাকে “জমির খাজনা” নামেই বেশি চিনতাম। এখন প্রশ্ন হলো, এই কর সময়মতো পরিশোধ করাটা কি খুব বেশি জরুরি? উত্তরটা হলো, হ্যাঁ, অবশ্যই জরুরি! আসুন, একটু বিস্তারিতভাবে জেনে নিই কেন:

  • আপনার জমির মালিকানার আইনগত ভিত্তি মজবুত হয়: নিয়মিত কর পরিশোধ করলে আপনার জমির ওপর আপনার আইনগত অধিকার আরও সুসংহত হয়। এর ফলে, আপনার জমি নিয়ে কেউ সহজে কোনো প্রশ্ন বা বিতর্ক তৈরি করতে পারবে না।
  • সরকারি রেকর্ডে সব তথ্য আপ-টু-ডেট থাকে: আপনার দেওয়া করের মাধ্যমেই সরকারি ডাটাবেজে আপনার জমির তথ্যগুলো হালনাগাদ করা হয়। এই আপ-টু-ডেট তথ্য ভবিষ্যতে যেকোনো প্রয়োজনে, যেমন জমি হস্তান্তর বা উত্তরাধিকার সূত্রে মালিকানা পরিবর্তনের সময় খুবই কাজে লাগে।
  • জমি কেনা-বেচার প্রক্রিয়া সহজ ও ঝামেলামুক্ত হয়: জমি বিক্রি করতে বা কিনতে গেলে এই কর পরিশোধের হালনাগাদ রশিদ (দাখিলা) একটা অপরিহার্য দলিল হিসেবে কাজ করে। এটা ছাড়া অনেক সময় কাজ আটকে যেতে পারে বা অহেতুক জটিলতা তৈরি হতে পারে।
  • ঋণ বা আর্থিক সহায়তা পেতে সুবিধা হয়: অনেক সময় ব্যাংক বা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে জমির বিপরীতে ঋণ (লোন) নিতে গেলে তারা এই কর পরিশোধের প্রমাণপত্র দেখতে চায়।
  • আইনি জটিলতা ও বাড়তি খরচ থেকে বাঁচা যায়: দীর্ঘদিন ধরে কর বকেয়া রাখলে কিন্তু সার্টিফিকেট মামলা বা এমনকি জমি নিলামে ওঠার মতো গুরুতর আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে! এর সাথে যুক্ত হয় বাড়তি জরিমানা ও হয়রানি। কে চায় বলুন তো এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলায় পড়তে?
  • দেশের উন্নয়নে আপনিও একজন গর্বিত অংশীদার: আপনার পরিশোধিত এই টাকাটা সরাসরি সরকারের রাজস্ব তহবিলে জমা হয় এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নে, যেমন রাস্তাঘাট নির্মাণ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নতিসহ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় হয়। তার মানে, সঠিকভাবে কর পরিশোধ করে আপনিও দেশের উন্নয়নে একজন গর্বিত অংশীদার হচ্ছেন!

তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, একজন সচেতন নাগরিক এবং দায়িত্বশীল জমির মালিক হিসেবে সময়মতো আপনার ভূমি উন্নয়ন কর বা জমির খাজনা পরিশোধ করাটা আপনার নিজের এবং দেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ!

ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের নতুন নিয়ম: এখন শুধুই অনলাইন!

একটা সময় ছিল যখন ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে হলে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে যেতে হতো। কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় সেই পদ্ধতির অবসান ঘটেছে। এখন ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের একমাত্র মাধ্যম হলো অনলাইন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের https://ldtax.gov.bd/ পোর্টাল ব্যবহার করে আপনি ঘরে বসেই কয়েকটি সহজ ধাপে আপনার জমির কর পরিশোধ করতে পারবেন। এতে আপনার সময় বাঁচবে, যাতায়াতের ঝামেলা কমবে এবং পুরো প্রক্রিয়াটি হবে আরও স্বচ্ছ।

তবে, যদি কেউ অনলাইন ব্যবহারে একেবারেই অপারগ হন বা বিশেষ কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকে, সেক্ষেত্রে নিকটস্থ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার বা সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে যোগাযোগ করে অনলাইন পেমেন্টের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা নিতে পারেন। কিন্তু মনে রাখবেন, পেমেন্টটি শেষ পর্যন্ত অনলাইন সিস্টেমের মাধ্যমেই সম্পন্ন হবে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ভূমি উন্নয়ন কর এখন ইংরেজি ক্যালেন্ডার বছর বা সাধারণত জুলাই থেকে জুন অর্থবছর অনুযায়ী محاسبه ও আদায় করা হয়। তাই, প্রতি অর্থবছরের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপনার জমির কর পরিশোধ করে নেওয়া ভালো।

অনলাইনে ভূমি কর পরিশোধের পদ্ধতি (ldtax.gov.bd ব্যবহার করে) – ধাপে ধাপে বিস্তারিত

চলুন, এবার দেখে নেওয়া যাক কীভাবে আপনি https://ldtax.gov.bd/ এই পোর্টালে গিয়ে খুব সহজেই আপনার ভূমি কর পরিশোধ করতে পারবেন। প্রক্রিয়াটি যতটা কঠিন মনে হচ্ছে, আসলে ততটা নয়। শুধু নিচের ধাপগুলো একটু মনোযোগ দিয়ে অনুসরণ করুন:

ধাপ ১: চলুন, ldtax.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করি

প্রথমেই আপনার কম্পিউটার, ল্যাপটপ অথবা স্মার্টফোন থেকে একটি ইন্টারনেট ব্রাউজার (যেমন: গুগল ক্রোম, মজিলা ফায়ারফক্স, মাইক্রোসফট এজ, সাফারি ইত্যাদি) ওপেন করুন। এরপর ব্রাউজারের এড্রেস বারে টাইপ করুন https://ldtax.gov.bd/ এবং এন্টার চাপুন। আপনি চাইলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রধান ওয়েবসাইট (land.gov.bd) থেকেও এই পোর্টালে যাওয়ার লিঙ্ক খুঁজে নিতে পারেন।

ldtax.gov.bd ওয়েবসাইটের হোমপেজ - অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের ঠিকানা
এই সেই ওয়েবসাইট, যেখানে আপনি সহজেই আপনার জমির খাজনা বা ভূমি কর পরিশোধ করতে পারবেন!

ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর আপনি “নাগরিক কর্ণার” বা এই ধরনের একটি সেকশন দেখতে পাবেন। সেখান থেকে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ সংক্রান্ত অপশনটি আপনাকে বেছে নিতে হবে।

ধাপ ২: রেজিস্ট্রেশন ও লগইন (যদি আপনি এই পোর্টালে নতুন হন)

যদি আপনি ldtax.gov.bd পোর্টালে একেবারেই নতুন হন, অর্থাৎ আগে কখনো এই পোর্টাল ব্যবহার করে কর পরিশোধ করেননি, তাহলে আপনাকে প্রথমে একটি ছোট্ট রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এটা খুবই সহজ এবং দ্রুত সম্পন্ন করা যায়। সাধারণত আপনার একটি সচল মোবাইল নম্বর, আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নম্বর এবং আপনার জন্ম তারিখ এই রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রয়োজন হবে।

  • ওয়েবসাইটের হোমপেজে “নিবন্ধন” বা “রেজিস্ট্রেশন” লেখা একটি বাটন দেখতে পাবেন, সেটিতে ক্লিক করুন।
  • এরপর আপনাকে আপনার মোবাইল নম্বরটি দিতে বলা হবে। মোবাইল নম্বর দেওয়ার পর আপনার মোবাইলে একটি OTP (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) আসবে।
  • ঐ OTP এবং আপনার NID নম্বর ও জন্ম তারিখ ব্যবহার করে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করুন। এই সময় আপনাকে নিজের পছন্দের একটি পাসওয়ার্ডও সেট করতে বলা হতে পারে, যেটি আপনি পরবর্তীতে লগইন করার সময় ব্যবহার করবেন এবং অবশ্যই সেটি নিরাপদে মনে রাখবেন বা কোথাও টুকে রাখবেন।

আর যদি আপনার পূর্বেই এই পোর্টালে একাউন্ট খোলা থাকে, তাহলে তো আর কোনো কথাই নেই! শুধু “লগইন” বা “প্রবেশ করুন” অপশনে ক্লিক করে আপনার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বর আর পাসওয়ার্ড (অথবা কিছু ক্ষেত্রে OTP-এর মাধ্যমেও লগইন করা যেতে পারে) দিয়ে পোর্টালে প্রবেশ করুন।

ধাপ ৩: আপনার জমি বা হোল্ডিং-এর তথ্যগুলো সঠিকভাবে দিন

সফলভাবে লগইন করার পর, আপনাকে আপনার সেই জমির তথ্যগুলো দিতে হবে, যেটির কর আপনি পরিশোধ করতে চান। এই তথ্যগুলো দেওয়ার সময় একটু সতর্ক থাকবেন, যাতে কোনো ভুল না হয়।

  • প্রথমে ড্রপডাউন মেনু থেকে আপনার বিভাগ, জেলা, উপজেলা/থানা/সিটি কর্পোরেশন এবং মৌজা সঠিকভাবে নির্বাচন করুন।
  • এরপর আপনার জমির খতিয়ান নম্বর (যেমন: এসএ, আরএস, বিএস, ডিপি, নামজারি খতিয়ান ইত্যাদি – আপনার কাছে যেটি আছে) অথবা হোল্ডিং নম্বর (যদি আপনার জমি পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন এলাকার মধ্যে হয়) নির্দিষ্ট ঘরে সতর্কতার সাথে লিখুন।
  • কোনো কোনো ক্ষেত্রে দাগ নম্বরও লাগতে পারে, সেটি আপনার খতিয়ানেই স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা থাকবে।
  • সব তথ্য সঠিকভাবে দেওয়া হয়ে গেলে “খুঁজুন” বা “Search” বাটনে একটি ক্লিক করুন।

আপনি যদি সব তথ্য নির্ভুলভাবে দিয়ে থাকেন, তাহলে কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনার জমির বিবরণ (যেমন মালিকের নাম, জমির পরিমাণ ইত্যাদি) এবং কত টাকা ভূমি উন্নয়ন কর বকেয়া আছে (যদি থাকে), সেটা স্ক্রিনে পরিষ্কারভাবে দেখতে পাবেন। যদি আপনার নামে একাধিক হোল্ডিং বা খতিয়ান এই সিস্টেমে যুক্ত থাকে, তাহলে তালিকা থেকে যেটির কর এই মুহূর্তে পরিশোধ করতে চান, সেটি নির্বাচন করতে পারবেন।

ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করার জন্য জমির তথ্য প্রদান প্রক্রিয়া
জমির তথ্যগুলো (যেমন: বিভাগ, জেলা, উপজেলা, মৌজা, খতিয়ান/হোল্ডিং নম্বর) সাবধানে এবং সঠিকভাবে পূরণ করুন, তাহলেই আপনার কাজ অনেক সহজ হয়ে যাবে!

ধাপ ৪: করের পরিমাণ যাচাই করুন এবং আপনার পছন্দের পেমেন্ট মাধ্যম বেছে নিন

এই ধাপে, আপনার নির্বাচিত জমির বিপরীতে কত টাকা ভূমি উন্নয়ন কর ধার্য করা হয়েছে, সেটা স্ক্রিনে বিস্তারিতভাবে দেখানো হবে। এখানে আপনি বর্তমান অর্থবছর পর্যন্ত অথবা নির্দিষ্ট কোনো অর্থবছর পর্যন্ত কর পরিশোধ করার অপশনও পেতে পারেন।

  • পরিশোধের জন্য মোট কত টাকা লাগছে (মূল কর, বকেয়া, সারচার্জ যদি থাকে), সেটা ভালো করে দেখে নিশ্চিত হয়ে নিন।
  • সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে “পরিশোধ করুন” বা “Pay Now” বা এই ধরনের কোনো একটি বাটনে ক্লিক করুন।
  • ক্লিক করার পরেই আপনাকে টাকা পাঠানোর জন্য বেশ কিছু জনপ্রিয় এবং নিরাপদ মাধ্যম দেখানো হবে, যেমন:
    • মোবাইল ব্যাংকিং (যেমন: বিকাশ, রকেট, নগদ, উপায় ইত্যাদি বহুল প্রচলিত এবং নির্ভরযোগ্য সার্ভিসগুলো)
    • ইন্টারনেট ব্যাংকিং (বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংকের অনলাইন ব্যাংকিং পোর্টাল বা মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে)
    • ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড (যেমন: ভিসা, মাস্টারকার্ড, আমেরিকান এক্সপ্রেস, নেক্সাসপে ইত্যাদি)
    • সমন্বিত পেমেন্ট গেটওয়ে যেমন একপে (ekPay) (যেখানে অনেকগুলো পেমেন্ট অপশন একসাথে পাওয়া যায়)
  • এই মাধ্যমগুলোর মধ্যে থেকে আপনার যেটাতে সবচেয়ে বেশি সুবিধা এবং স্বাচ্ছন্দ্য বোধ হয়, সেই পেমেন্ট পদ্ধতিটা বেছে নিন।

ধাপ ৫: নিরাপদে পেমেন্টটি সম্পন্ন করুন

আপনি যে পেমেন্ট পদ্ধতিটি বেছে নিয়েছেন, সেই অনুযায়ী পরবর্তী নির্দেশনাগুলো স্ক্রিনে দেখানো হবে। সেগুলো মনোযোগ দিয়ে অনুসরণ করে পেমেন্টটা সম্পন্ন করুন। উদাহরণস্বরূপ, যদি বিকাশ সিলেক্ট করেন, তাহলে আপনাকে আপনার বিকাশ একাউন্ট নম্বর দিতে হবে, এরপর আপনার মোবাইলে একটি ভেরিফিকেশন কোড বা OTP আসবে, সেটি দিতে হবে এবং সবশেষে আপনার বিকাশের গোপন পিন নম্বরটি দিয়ে পেমেন্ট নিশ্চিত করতে হবে। অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ব্যাংকিং বা কার্ডের ক্ষেত্রেও প্রায় একই রকম সুরক্ষিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়।

একটা জরুরি সতর্কতা: পেমেন্ট করার সময় আপনার পিন নম্বর, পাসওয়ার্ড, কার্ডের সিভিভি নম্বর বা অন্য কোনো গোপনীয় তথ্য যেন আর কেউ না জানতে পারে, সেদিকে সর্বোচ্চ খেয়াল রাখবেন। কখনোই এই ধরনের তথ্য কারো সাথে ফোনে বা মেসেজে শেয়ার করবেন না। আর হ্যাঁ, চেষ্টা করবেন একটি ভালো এবং নিরাপদ ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করতে, যেমন আপনার বাসার সুরক্ষিত ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক বা নির্ভরযোগ্য মোবাইল ডাটা। পাবলিক প্লেসের ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহার করে আর্থিক লেনদেন না করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

ধাপ ৬: পেমেন্ট রসিদ (দাখিলা) ডাউনলোড করুন এবং সযত্নে সংরক্ষণ করুন

সফলভাবে পেমেন্ট সম্পন্ন হলেই আপনার কাজ শেষ! মানে, আপনার জমির খাজনা পরিশোধ হয়ে গেছে। সাথে সাথেই আপনি স্ক্রিনে একটি পেমেন্ট কনফার্মেশন মেসেজ দেখতে পাবেন এবং একটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হওয়া ডিজিটাল রসিদ বা দাখিলা স্ক্রিনে প্রদর্শিত হবে। এই রসিদটা সাথে সাথেই ডাউনলোড করে আপনার কম্পিউটার, মোবাইল বা গুগল ড্রাইভের মতো কোনো নিরাপদ ক্লাউড স্টোরেজে সেভ করে রাখুন। প্রয়োজনে এটি প্রিন্টও করে নিতে পারেন। এই দাখিলাটিই আপনার ভূমি কর পরিশোধের অকাট্য প্রমাণ (land tax payment BD online receipt)। রসিদে একটি স্বতন্ত্র ট্রানজেকশন আইডি বা দাখিলা নম্বর থাকবে, যেটা পরবর্তীতে যেকোনো প্রয়োজনে (যেমন রেকর্ড যাচাই বা কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে) কাজে লাগতে পারে। আপনি আপনার ldtax.gov.bd পোর্টালে আপনার প্রোফাইলের ড্যাশবোর্ড বা পেমেন্ট হিস্টোরি থেকেও পরবর্তীতে এই দাখিলা খুঁজে বের করে পুনরায় ডাউনলোড করতে পারবেন।

এই ডিজিটাল দাখিলাটা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা সরকারি দলিল! এটা প্রিন্ট করে আপনার জমির অন্যান্য সব কাগজপত্রের সাথে খুব যত্ন করে একটা ফাইলে গুছিয়ে রেখে দিন। ভবিষ্যতে যেকোনো সময় এটা আপনার প্রয়োজন হতে পারে।

অনলাইন পেমেন্টে সমস্যা হলে বা সহায়তার প্রয়োজন হলে:

যদিও ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ বর্তমানে সম্পূর্ণ অনলাইন-ভিত্তিক, তবুও যদি আপনি অনলাইন প্রক্রিয়া ব্যবহারে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হন বা আপনার বিশেষ কোনো সহায়তার প্রয়োজন হয়, তাহলে আপনি নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো বিবেচনা করতে পারেন:

  • আপনার নিকটস্থ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে (UDC) যোগাযোগ করুন। সেখানকার উদ্যোক্তারা আপনাকে অনলাইন পেমেন্ট প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে পারবেন।
  • সরাসরি আপনার সংশ্লিষ্ট উপজেলা/সার্কেল ভূমি অফিসে যোগাযোগ করে তাদের কাছ থেকে অনলাইন পেমেন্টের বিষয়ে পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা চাইতে পারেন।
  • ভূমি মন্ত্রণালয়ের হেল্পলাইন নম্বরে (যদি থাকে) কল করেও সহায়তা চাইতে পারেন।

মনে রাখবেন, মূল পেমেন্টটি অনলাইন সিস্টেমের মাধ্যমেই সম্পন্ন হবে, তবে এই কেন্দ্রগুলো আপনাকে প্রক্রিয়াটি বুঝতে এবং সম্পন্ন করতে সহায়তা করতে পারে।

ভিডিওতে দেখে নিন: অনলাইনে ভূমি কর দেওয়ার পুরো প্রক্রিয়া আরও সহজে!

লেখা পড়ে অনেক সময় সবটা ঠিকমতো বোঝা যায় না, তাই না? আর যদি পুরো ব্যাপারটা একবার চোখের সামনে দেখতে পেতেন, তাহলে কেমন হতো? আপনাদের সুবিধার জন্য নিচে একটা ভিডিও টিউটোরিয়াল যুক্ত করে দিলাম। এই ভিডিওটা দেখলে আশা করি অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের পদ্ধতি আপনার কাছে আরও অনেক বেশি পরিষ্কার এবং সহজ হয়ে যাবে।

(একটা জরুরি কথা: উপরের ভিডিওটা একটা উদাহরণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। আপনি ইউটিউবে গিয়ে “ভূমি উন্নয়ন কর অনলাইন পেমেন্ট” বা “ldtax payment process” লিখে সার্চ করলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব চ্যানেল বা অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে এই বিষয়ের ওপর আরও নতুন এবং বিস্তারিত ভিডিও টিউটোরিয়াল খুঁজে নিতে পারবেন।)

অনলাইনে ভূমি কর দিতে কী কী কাগজপত্র বা তথ্য হাতের কাছে রাখা ভালো?

আপনি যখন অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে বসবেন, তখন কিছু মৌলিক ডকুমেন্ট ও তথ্য হাতের কাছে প্রস্তুত রাখলে আপনার কাজটা অনেক দ্রুত এবং মসৃণভাবে সম্পন্ন হবে। একটা ছোট্ট চেকলিস্ট দিচ্ছি, মিলিয়ে নিন:

  • জমির সর্বশেষ খতিয়ানের কপি: আপনার জমির এসএ, আরএস, বিএস, সিএস বা সবচেয়ে নতুন যে নামজারি খতিয়ানটা হয়েছে, সেটার একটা স্পষ্ট ফটোকপি বা মূলকপি (ডিজিটাল কপি হলেও চলবে)।
  • খতিয়ানে উল্লিখিত দাগ নম্বর: আপনার খতিয়ানেই জমির দাগ নম্বরটা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা থাকবে।
  • হোল্ডিং নম্বর (যদি প্রযোজ্য হয়): আপনার জমি যদি পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন এলাকার ভেতরে হয়, তাহলে একটি হোল্ডিং নম্বর থাকবে, সেটি প্রয়োজন হবে।
  • জমির পরিমাণ: খতিয়ান অনুযায়ী আপনার জমির মোট পরিমাণ (শতাংশ, একর, হেক্টর বা বিঘা-কাঠা এককে)।
  • পূর্ববর্তী কর পরিশোধের রসিদ (যদি থাকে): এটা আপনার কত টাকা বকেয়া আছে, সেটা নিরূপণ করতে এবং হিসাবের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে (যদিও অনলাইন সিস্টেমে সাধারণত পূর্বের তথ্য সংরক্ষিত থাকে)।
  • জাতীয় পরিচয়পত্র (NID): আবেদনকারী অর্থাৎ আপনার বা জমির যিনি প্রকৃত মালিক, তার NID নম্বর (বিশেষ করে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ও ভেরিফিকেশনের জন্য এটি আবশ্যক)।
  • সচল মোবাইল নম্বর: অনলাইন রেজিস্ট্রেশন, লগইন এবং OTP (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) ভেরিফিকেশনের জন্য একটি চালু মোবাইল নম্বর হাতের কাছে রাখুন। এই নম্বরেই আপনার পেমেন্ট কনফার্মেশনও আসতে পারে।
  • জমির মালিকের নাম ও ঠিকানা: খতিয়ানে যেভাবে মালিকের নাম এবং ঠিকানা লেখা আছে, সেভাবে।

কিছু জরুরি পরামর্শ: অনলাইনে ভূমি কর দেওয়ার সময় এই বিষয়গুলো অবশ্যই মাথায় রাখুন

অনলাইনে ভূমি কর দেওয়ার সময় কয়েকটা বিষয় একটু বাড়তি খেয়াল রাখলে আপনি অনেক অহেতুক ঝামেলা থেকে বেঁচে যাবেন এবং আপনার পুরো প্রক্রিয়াটাও নিরাপদ ও মসৃণ হবে। চলুন, জেনে নিই সেই গুরুত্বপূর্ণ টিপসগুলো:

  • সঠিক তথ্য দিন, নির্ভুল পেমেন্ট করুন: অনলাইন পোর্টালে জমির তথ্য (যেমন: বিভাগ, জেলা, মৌজা, খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, হোল্ডিং নম্বর ইত্যাদি) একেবারে নির্ভুলভাবে প্রদান করুন। সামান্য ভুলের কারণে আপনার পেমেন্ট অন্য কোনো হোল্ডিং বা খতিয়ানে চলে যেতে পারে, অথবা আপনার পেমেন্টটাই অসম্পূর্ণ বা ভুল হিসেবে গণ্য হতে পারে!
  • নিরাপদ ওয়েবসাইট ও পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করুন: অনলাইন পেমেন্টের সময় সর্বদা সরকারি ওয়েবসাইট (https://ldtax.gov.bd/) ব্যবহার করছেন কিনা, তা নিশ্চিত হয়ে নিন (ব্রাউজারের এড্রেস বারে “https” এবং তালার চিহ্ন আছে কিনা দেখুন)। পেমেন্টের জন্য নিরাপদ এবং ভেরিফাইড পেমেন্ট গেটওয়ে (যেমন আপনার ব্যাংকের নিজস্ব পোর্টাল বা সুপরিচিত মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ) নির্বাচন করুন। আপনার পিন, পাসওয়ার্ড, কার্ডের গোপনীয় তথ্য কখনোই কারো সাথে শেয়ার করবেন না বা ফিশিং সাইটের ফাঁদে পা দেবেন না।
  • সময়মতো কর পরিশোধ করুন, নিশ্চিন্ত থাকুন: প্রতি অর্থবছর (সাধারণত ১ জুলাই থেকে পরবর্তী বছরের ৩০ জুন) অনুযায়ী ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা উচিত। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কর পরিশোধ না করলে বকেয়া করের ওপর জরিমানা বা সারচার্জ আরোপিত হতে পারে এবং বিভিন্ন আইনগত জটিলতাও সৃষ্টি হতে পারে।
  • ডিজিটাল দাখিলা সংরক্ষণ করুন: কর পরিশোধের পর যে ডিজিটাল দাখিলা বা রসিদটি পাবেন, সেটি অত্যন্ত যত্নসহকারে আপনার কম্পিউটার, মোবাইল বা ক্লাউড স্টোরেজে সংরক্ষণ করুন এবং পারলে একটি প্রিন্ট কপিও রেখে দিন। এটি আপনার কর পরিশোধের অকাট্য প্রমাণ এবং ভবিষ্যতে যেকোনো প্রয়োজনে (যেমন মালিকানা প্রমাণ, রেকর্ড যাচাই ইত্যাদি) কাজে লাগবে।
  • অপ্রয়োজনীয় তৃতীয় পক্ষের সহায়তা এড়িয়ে চলুন: অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের পদ্ধতি এখন এতটাই সহজ যে এর জন্য সাধারণত কোনো দালালের বা অপ্রয়োজনীয় তৃতীয় পক্ষের সাহায্য নেওয়ার প্রয়োজন নেই। আপনি নিজেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন। একান্ত প্রয়োজন হলে সরকারি হেল্পলাইন বা বিশ্বস্ত ডিজিটাল সেন্টারের সহায়তা নিন।
  • বকেয়া থাকলে সুদ বা জরিমানা প্রযোজ্য হতে পারে: নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ না করলে, আপনার বকেয়া করের পরিমাণের উপর সরকার নির্ধারিত হারে বিলম্ব মাশুল বা জরিমানা প্রযোজ্য হতে পারে। তাই সময়মতো কর পরিশোধ করে এই বাড়তি খরচ এড়িয়ে চলুন।
  • জমির শ্রেণি বা ব্যবহারে পরিবর্তন হলে তা আপডেট করুন: যদি কোনো কারণে আপনার জমির শ্রেণি (যেমন: কৃষি থেকে অকৃষি, আবাসিক থেকে বাণিজ্যিক ইত্যাদি) বা ব্যবহারে পরিবর্তন আসে, তাহলে সেটা অবশ্যই দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে যথাযথ প্রক্রিয়ায় জানিয়ে করের হার সমন্বয় বা পুনর্নির্ধারণ করে নেবেন।

এক নজরে অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের পুরো প্রক্রিয়া (আপনার সুবিধার জন্য একটি কুইক রিক্যাপ)

এতক্ষণ তো আমরা বিস্তারিতভাবে সবকিছু জানলাম। চলুন, এক ঝলকে পুরো অনলাইন প্রক্রিয়াটা আবার দেখে নিই, যাতে আপনার মনে রাখতে এবং অনুসরণ করতে আরও সুবিধা হয়:

  1. ওয়েবসাইটে প্রবেশ ও রেজিস্ট্রেশন/লগইন: প্রথমে ldtax.gov.bd ওয়েবসাইটে যান। নতুন ব্যবহারকারী হলে আপনার মোবাইল নম্বর ও NID দিয়ে নিবন্ধন করুন, আর পুরাতন ব্যবহারকারী হলে মোবাইল নম্বর ও পাসওয়ার্ড/OTP দিয়ে লগইন করুন।
  2. জমির তথ্য প্রদান: আপনার বিভাগ, জেলা, উপজেলা, মৌজা এবং জমির খতিয়ান/হোল্ডিং নম্বর সঠিকভাবে সিস্টেমে ইনপুট দিন।
  3. জমির বিবরণ ও করের পরিমাণ যাচাই: আপনার জমির বিবরণ এবং মোট প্রদেয় করের পরিমাণ (চলতি ও বকেয়া সহ) ভালো করে দেখে নিশ্চিত হোন।
  4. পেমেন্ট মাধ্যম নির্বাচন ও পেমেন্ট: আপনার পছন্দের মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ, রকেট, নগদ ইত্যাদি), ইন্টারনেট ব্যাংকিং বা ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড অপশন ব্যবহার করে নিরাপদে পেমেন্ট সম্পন্ন করুন।
  5. ডিজিটাল রসিদ (দাখিলা) ডাউনলোড ও সংরক্ষণ: পেমেন্ট সফল হওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে প্রাপ্ত ডিজিটাল দাখিলাটি ডাউনলোড করে সংরক্ষণ করুন এবং প্রয়োজনে একটি প্রিন্ট কপিও নিজের কাছে রেখে দিন।

আপনার ভূমি কর পরিশোধ প্রক্রিয়া আনন্দময়, সহজ এবং ঝামেলামুক্ত হোক, এই আন্তরিক কামনা রইলো!

আপনাদের কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা ও তার সহজ সমাধান (FAQ Section)

ভূমি কর নিয়ে আপনাদের মনে আরও কিছু প্রশ্ন নিশ্চয়ই ঘুরপাক খাচ্ছে? চলুন, সবচেয়ে বেশি জিজ্ঞাসিত এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্নের উত্তর সহজ ও সাবলীলভাবে দেওয়ার চেষ্টা করি:

প্রশ্ন ১: ভূমি উন্নয়ন কর ঠিক কোন সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়? করবর্ষ কখন শুরু হয়?

উত্তর: দেখুন, ভূমি উন্নয়ন কর সাধারণত প্রতি অর্থবছর অনুযায়ী পরিশোধ করতে হয়। বাংলাদেশে অর্থবছর শুরু হয় ১ জুলাই এবং শেষ হয় পরবর্তী বছরের ৩০ জুন। এই সময়ের মধ্যেই সাধারণত পূর্ববর্তী অর্থবছরের (যদি বকেয়া থাকে) এবং চলতি অর্থবছরের কর পরিশোধ করে ফেলা ভালো। সরকার অনেক সময় কর পরিশোধের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমাও (যেমন, জরিমানা ছাড়া কর পরিশোধের শেষ তারিখ) ঘোষণা করে থাকে। সেই সময়ের মধ্যে পরিশোধ না করলে কিন্তু বকেয়ার ওপর জরিমানা বা বিলম্ব মাশুল প্রযোজ্য হতে পারে। তাই দেরি না করে অর্থবছরের সুবিধাজনক সময়ে বা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কর দিয়ে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ!

প্রশ্ন ২: অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করলে কি কোনো অতিরিক্ত চার্জ বা ফি দিতে হয়?

উত্তর: সাধারণত, ভূমি মন্ত্রণালয়ের ldtax.gov.bd পোর্টালে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো অতিরিক্ত সার্ভিস চার্জ বা ফি ধার্য করা হয় না। তবে, আপনি যে পেমেন্ট গেটওয়ে বা মাধ্যম ব্যবহার করছেন (যেমন: বিকাশ, রকেট, নগদ, কোনো ব্যাংকের কার্ড বা ইন্টারনেট ব্যাংকিং), তাদের নিজস্ব কিছু নামমাত্র ট্রানজেকশন ফি বা চার্জ থাকতে পারে। এই ফি (যদি থাকে) সাধারণত খুবই সামান্য হয় এবং পেমেন্ট করার সময় আপনাকে সেটি স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দেওয়া হয়।

প্রশ্ন ৩: আমি যদি আমার জমির খতিয়ান নম্বর বা হোল্ডিং নম্বর না জানি, তাহলে কীভাবে অনলাইনে কর পরিশোধ করবো?

উত্তর: এটা একটা খুবই বাস্তবসম্মত প্রশ্ন। যদি আপনার জমির খতিয়ান নম্বর বা হোল্ডিং নম্বর জানা না থাকে, তাহলে ldtax.gov.bd পোর্টালে অনেক সময় “খতিয়ান অনুসন্ধান” বা এই ধরনের কোনো অপশন থাকতে পারে, যেখানে আপনি আপনার নাম, পিতার নাম অথবা আপনার মৌজা ও দাগ নম্বর দিয়ে খতিয়ান খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে পারেন। তবে, সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় হলো, আপনি যদি আপনার এলাকার সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিস বা উপজেলা/সার্কেল ভূমি অফিসে সরাসরি যোগাযোগ করেন। সেখানকার কর্মকর্তারা আপনাকে আপনার জমির সঠিক খতিয়ান বা হোল্ডিং নম্বর খুঁজে পেতে এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে পারবেন।

প্রশ্ন ৪: ভুলবশত বেশি বা কম টাকা পরিশোধ করে ফেললে সেক্ষেত্রে আমার কী করণীয়?

উত্তর: এমনটা হতেই পারে এবং এটা একটা চিন্তার বিষয়। যদি ভুল করে বেশি টাকা পরিশোধ করে ফেলেন, তাহলে সাধারণত সেই অতিরিক্ত টাকা ফেরত পাওয়ার প্রক্রিয়াটা একটু জটিল এবং সময়সাপেক্ষ হতে পারে। এর জন্য আপনাকে যথাযথ প্রমাণসহ (যেমন পেমেন্টের দাখিলা, ব্যাংক স্টেটমেন্ট ইত্যাদি) সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে আবেদন করতে হতে পারে। আর যদি প্রয়োজনের চেয়ে কম টাকা পরিশোধ করেন, তাহলে আপনার করের একটি অংশ বকেয়া হিসেবেই থেকে যাবে এবং সেটির জন্য পরবর্তীতে জরিমানা প্রযোজ্য হতে পারে। উভয় ক্ষেত্রেই, যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় প্রমাণাদিসহ আপনার এলাকার সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসি (ল্যান্ড) অফিস অথবা ক্ষেত্রবিশেষে জেলা প্রশাসকের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে তাদের সুনির্দিষ্ট পরামর্শ এবং নির্দেশনা গ্রহণ করা উচিত।

প্রশ্ন ৫: যারা প্রবাসী বাংলাদেশি, তারা কীভাবে তাদের নিজ দেশের জমির ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে পারবেন?

উত্তর: হ্যাঁ, অবশ্যই পারবেন! প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকরাও এখন আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে ldtax.gov.bd ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে তাদের নিজ দেশের জমির ভূমি উন্নয়ন কর খুব সহজেই পরিশোধ করতে পারবেন। তাদের শুধু বাংলাদেশে রেজিস্ট্রেশনের জন্য একটি সচল মোবাইল নম্বর (যেখানে OTP অর্থাৎ ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড যাবে) এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য কোনো পেমেন্ট পদ্ধতি (যেমন, কিছু ক্ষেত্রে ডুয়াল কারেন্সি সাপোর্টেড ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড) ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া, তারা চাইলে বাংলাদেশে তাদের কোনো বিশ্বস্ত আত্মীয় বা আইনানুগ প্রতিনিধির (মোক্তারনামা বা পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি মূলে) মাধ্যমেও তাদের পক্ষে এই কর পরিশোধের যাবতীয় ব্যবস্থা সম্পন্ন করতে পারেন।

শেষ কথা: নিয়মিত অনলাইনে কর দিন, নিশ্চিন্তে থাকুন এবং দেশের উন্নয়নে অবদান রাখুন!

দেখলেন তো, অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ পদ্ধতি এখন আর আগের মতো জটিল বা সময়সাপেক্ষ কোনো কাজই নয়! বরং, এটা এখন অনেক বেশি সহজ, স্বচ্ছ, নিরাপদ এবং ঝামেলামুক্ত। ভূমি মন্ত্রণালয়ের ldtax.gov.bd পোর্টাল আমাদের জন্য এই অসাধারণ সুযোগটি করে দিয়েছে। আশা করি, এই বিস্তারিত গাইডটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে এবং আপনারা ২০২৫ সালে এবং তার পরেও কোনো প্রকার অহেতুক হয়রানি ছাড়াই নিজেদের মূল্যবান জমির ভূমি উন্নয়ন কর বা জমির খাজনা সঠিকভাবে ও সময়মতো পরিশোধ করতে পারবেন। মনে রাখবেন, নিয়মিত কর পরিশোধ করে আপনি কেবল আপনার জমির মালিকানাই সুরক্ষিত করছেন না এবং আইনি জটিলতা এড়াচ্ছেন না, বরং একজন সুনাগরিক হিসেবে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নেও সক্রিয়ভাবে অবদান রাখছেন।

যদি এই আর্টিকেলটি আপনাদের একটুও সহায়ক মনে হয়ে থাকে এবং আপনারা উপকৃত হন, তাহলে আপনার বন্ধু, পরিবার এবং পরিচিতজনদের সাথে এটি শেয়ার করতে একদমই ভুলবেন না যেন! তাতে তারাও ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের এই আধুনিক, সহজ এবং ঝামেলামুক্ত পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন এবং এর সুফল ভোগ করতে পারবেন। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন!

এই সম্পর্কিত আরও কিছু দরকারি এবং তথ্যবহুল লেখা, যা আপনার পরবর্তীতে কাজে লাগতে পারে!

Share This Article
Leave a Comment